লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

বাংলা টাইপিং কে সহজ করে দেয়া অভ্র 'র গল্প


বাংলা কীবোর্ডে লেখা অপেক্ষাকৃত কঠিন , যার কারনে অনেকেই বাংলা উচ্চারন ইংরেজিতে লিখত , কিন্তু এখন শুধু একটি সফটওয়্যারের জন্য খুব সহজেই উচ্চারনের ব্যাবহার দিয়েই বাংলা টাইপ করতে পারছে , এর জন্য তাকে কীবোর্ডের কোন বাটনের অক্ষর মুখস্ত রাখতে হচ্ছে না ।
সকলেই খুব সহযে এটি ব্যাবহার করতে  পারছে , বাংলা কী বোর্ডে লেখাকে এতটা সহজ বান্ধব করে দেয়া সফটওয়্যারটি হল ' অভ্র ' ।

এটি  ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার বিনামূল্যের ও মুক্ত সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যারটির অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এতে ফোনেটিক (ইংরেজিতে উচ্চারণ করে বাংলা লেখা) পদ্ধতিতে বাংলা লেখা যায়।উইন্ডোজে ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য ২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যারটি আবির্ভূত হয়।
মেহদী হাসান খান নামে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একজন ছাত্র তার ‘ওমিক্রন ল্যাব’ থেকে  ২০০৩ সালে অভ্র কীবোর্ড তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি এটি সর্বপ্রথম তৈরি করেছিলেন ভিজুয়াল বেসিক প্রোগ্রামিং ভাষা দিয়ে, পরবর্তীতে তিনি তা ডেলফিতে ভাষান্তর করেন। এই সফটওয়্যারটির লিনাক্স সংস্করণ লেখা হয়েছে সি++ প্রোগ্রামিং ভাষায়। পরবর্তীতে রিফাত-উন-নবী, তানবিন ইসলাম সিয়াম, রাইয়ান কামাল, শাবাব মুস্তফা এবং নিপুন হক এই সফটওয়্যারের উন্নয়নের সাথে যুক্ত হন । এই প্রজেক্টের সূচনা হয় ২০০৩ সালের বইমেলা থেকেই তখন সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স, বায়োস নামে একটা সংগঠন বাংলা নামে একটা প্রদর্শনী করে। এখানে পুরো ইন্টারফেসটা ছিলো বাংলায় এবং বাংলায় লেখালেখিও করা যেতো। মেহেদি হাসান তাদের বাংলা ফন্টটা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেন বাংলায় লেখালেখির জন্য। কিন্তু দেখা গেলো এই ফন্ট ব্যবহার করে লেখার জন্য উইন্ডোজে কোন কি-বোর্ড নেই। অনেক ঝামেলা করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের ইনসার্ট ক্যারেক্টার থেকে ওই ফন্টের ক্যারেক্টারগুলো ব্যবহার করে বাংলা লেখা সম্ভব। কিন্তু সরাসরি ওই ফন্টের জন্য কোন কি-বোর্ড ছিলো না। মানে হলো, ওই ফন্টের জন্য একটা কি-বোর্ড থাকলে উইন্ডোজ ইউনিকোডে বাংলা লেখা সম্ভব ছিলো। ব্যস, তখন থেকেই তিনি কাজে নেমে পড়েন। ডেভলপার হিসেবে কাজ করেছেন রিফাত-উন-নবী। আর ফন্ট ডেভলপার হিসেবে কাজ করেছেন সিয়াম। সিয়াম-রুপালী ফন্টটা তারই বানানো।

অভ্র রিলিজের পর জনপ্রিয়তা ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ল টাইপিং এ অদক্ষ লোকও নিজের ছোট খাট কাজগুলো নিজেই টাইপ করে ফেলতে পারল ,  অভ্রর জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে তখন এতে বাধা আসে বিজয় থেকে । কম্পিউটারে বাংলা লেখার বাণিজ্যিক ক্লোজ সোর্স সফটওয়্যার ‘বিজয়’ এর স্বত্বাধিকারী এবং ‘আনন্দ কম্পিউটার্স’ এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার ৪ঠা এপ্রিল ২০১০ তারিখে দৈনিক জনকন্ঠের একটি নিবন্ধে অভ্রর দিকে ইঙ্গিত করে দাবী করেন যে- হ্যাকাররা তার ‘বিজয়’ সফটওয়্যারটি চুরি করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি অভ্র কীবোর্ডকে পাইরেটেড সফটওয়্যার হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি হ্যাকারদের সহযোগিতা করেছে। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে ইউএনডিপি-র প্ররোচনাতেই জাতীয় তথ্যভান্ডার তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করা হয়েছে। মেহেদী হাসান খান জানান যে ক্লোজড সোর্স প্রোগ্রাম হ্যাক করা সম্ভব নয় বিধায় বিজয়ের সিস্টেম হ্যাক করা সম্ভব নয়। অপরদিকে, অভ্র'র পক্ষ থেকে মেহদী হাসান খান সকল নালিশ অস্বীকার করেন এবং অভিযোগ করেন যে, জব্বার বিভিন্ন পর্যায়ে ও গণমাধ্যমে তাদেরকে চোর বলেন এবং তাদের প্রতিবাদ সেখানে উপেক্ষিত হয়। কম্পিউটারে বাংলা নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য উকিল নোটিশ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে আক্রমণের হুমকি উপেক্ষা করে কাজ করা স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা। তিনি আরো বলেন যে নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয় এর পরিবর্তে বিনামূল্যের অভ্র ব্যবহার করাতে প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হওয়ায় জব্বার এমন অভিযোগ করেছেন।  সে অভিযোগ অতটাও গুরুত্ব পেল না ।
কিন্তু পরবর্তীতে আবার  , অভ্র ৪.৫.১ সফটওয়্যারের সাথে ইউনিবিজয় নামে একটি কীবোর্ড লেয়াউট সরবরাহ করা হয়। এই ইউনিবজয় কীবোর্ড লেয়াউট প্যাটেন্টকৃত বিজয় কীবোর্ড লেয়াউটের নকল দাবী করে মোস্তফা জব্বার কপিরাইট অফিসে কপিরাইট আইন ভঙ্গের জন্য মেহেদী হাসান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে কপিরাইট অফিস খানকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠায়  পরবর্তীতে ১৬ জুন ২০১০ তারিখে ঢাকার আগারগাঁও এ অবস্থিত বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মেহদী হাসান খান ও মোস্তফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয় এই মর্মে, ২০ আগস্ট, ২০১০ এর মধ্যে, অভ্র কীবোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লেআউট সরিয়ে নেওয়া হবে এবং কপিরাইট অফিস থেকে মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। সেই চুক্তি অণুযায়ী, অভ্রর ৪.৫.৩ সংস্করণ থেকে ইউনিবিজয় কীবোর্ড বাদ দেওয়া হয়। তিনি অভ্র কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান।

তবে যাই হোক এটি অস্বীকার করার কোন উপায়ই নেই যে আজ অভ্রের জন্যই  অসংখ্য মানুষ কম্পিউটার বা মোবাইলে বাংলায় তাদের মনের ভাব প্রকাশ করছে ।  অভ্রের স্লোগান হল ভাষা হোক উন্মুক্ত ।  তারা তাদের মুল লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাক , আর শেষ করছি
মেহেদি হাসান খানের কোন এক স্বাক্ষাৎকারে দেয়া একটি চমৎকার উক্তি দিয়ে " আমি এখন আর অসাধারণ মানুষে বিশ্বাস করি না। বরং আমি সে সব সাধারণ মানুষে বিশ্বাস করি যারা বেপরোয়া হয়ে অসাধারণ সব কাজ করছেন "