লিট বাংলা ডট টেক, প্রযুক্তির হাতেখড়ি হোক বাংলাতেই।

হ্যাকিং / সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলা প্রযুক্তির ব্লগ

কুকুর নিধন বন্ধ করুন।




নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঁচ শতাধিক কুকুরকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার প্রতিবাদে ‘বাঁচাও বিধাতা’ স্লোগানে শনিবার (২৮ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাণী কল্যাণে সর্ব সংগঠন এ মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার সার্ক ফোয়ারার সামনে স্বতঃস্ফূর্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গল ও বুধবার ঘাটফরহাদবেগ, মোহাম্মদপুর ও উত্তর আগ্রাবাদে চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীরা বিষ খাইয়ে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করছে বলে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক ও ছড়াকার আলেক্স আলীম বাংলানিউজকে বলেন, কুকুর প্রভুভক্ত, উপকারী প্রাণী। যদি বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যায় নগরীতে তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (বন্ধ্যাকরণ) প্রয়োগ করা যেতে পারে। আইন না মেনে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্বিচারে, অমানবিকভাবে কুকুর নিধন সমাধান হতে পারে না। ভারতে সাপের কামড়ে অনেক মানুষ মারা যায়, কিন্তু তাই বলে কি সাপ মেরে ফেলে তারা? কুকুরসহ যেকোনো প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।   

তবে উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক বলেছেন, কুকুরের উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় লোকজন কিছু কুকুরকে মেরে ফেলেছে বলে শুনেছি। তবে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর সঙ্গে চসিকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

কুকুর নিধনের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন শনিবার

শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) রাত নয়টায় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিয়াজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, একজন মিডিয়াকর্মী ফোন করে নগরীতে কুকুর নিধনের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আরেকজন সাংবাদিক কুকুরের বন্ধ্যাকরণ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। এর আগে বা পরে আর কোনো সংগঠন বা ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো অভিযোগ বা খবর পাইনি।

তিনি বলেন, কুকুরকে বন্ধ্যা করতে হলে অস্ত্রোপচার, এন্টিবায়োটিক, ইঞ্জেকশন থেকে শুরু করে সুস্থ করা পর্যন্ত গড়ে ২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। নগরীতে ৪ লাখের বেশি কুকুর আছে। আমাদের তো এ ধরনের কোনো তহবিল বা প্রকল্প নেই।            

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে চসিক কুকুর নিধন কর্মসূচি বন্ধ রেখেছে। আমরা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সুপারিশের ভিত্তিতে কুকুরে কামড়ানো মানুষকে চসিক জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ২৬ বছর সিটি করপোরেশনে চাকরি করছি। নিষেধাজ্ঞার আগে কুকুর মারত চসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ। চসিকের বিরুদ্ধে এখন যে ঢালাও অভিযোগ উঠেছে খোঁজখবর নিয়ে তার কোনো সত্যতা পাইনি আমরা। এখন তো মাঘ মাস, আগে ভাদ্র মাসে কুকুরের উপদ্রব বাড়ত।

চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, চসিকের উত্তরোত্তর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বেশ কিছু মহল সুকৌশলে বিভিন্ন বানোয়াট বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে, তরুণ প্রজন্মকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করছে। তারূণ্য শক্তিকে তারা অপব্যয় করছে তাদের হীন নীচ স্বার্থ হাসিল করতে। মহামান্য আদালতের রায়ের বিপক্ষে চসিক কখনোই যায় নি। বরং আইনের প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল। ফেসবুকে কুকুর প্রেমী একটি গ্রুপে সংগৃহীত কিছু ছবি প্রকাশ করে দাবি করা হয়েছিল সিটি করপোরেশন নির্বিচারে কুকুর নিধন করেছে। অথচ ছবিগুলো কোথায় তোলা হয়েছে, কবেকার ছবি সেসব নিয়ে কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই।

তিনি বলেন, ফেসবুকে প্রকাশিত ছবিগুলোতে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে সেসব মৃত কুকুরগুলো প্রকাশ্য দিবালোকে ডাস্টবিন, নর্দমার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। অত্যন্ত হাস্যকর ব্যাপার যে, চসিক কি এতটাই নির্বোধ যে এরকম অমানবিক কাজ করার পরে, সেটা আবার প্রকাশ্য দিবালোকে ফেলে রাখবে?

নগরীতে কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানান, সপ্তাহখানেক আগে বাঁশখালীতে কুকুরের উপদ্রব বেড়েছিল। কুকুরের কামড়ে আহতদের ভ্যাকসিনও দিয়েছি আমরা। নগরীতে এখনো কুকুরের উপদ্রব বেড়েছে বা কুকুরের কামড়ে অনেক মানুষ আহত হচ্ছে এমন খবর পাইনি।  

২০১৪ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে কুকুর নিধন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ২০১৪ সালেই ঢাকা সিটি করপোরেশন কুকুর নিধন কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনার কাজ শুরু করে। পরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন আলাদা করে ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।